২১ এপ্রিল ২০২৫ - ২৩:১৩
Source: Parstoday
মধ্য এশিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা

পার্সটুডে-ইউরোপীয় ইউনিয়ন মধ্য এশীয় দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে চীন ও রাশিয়ার সাথে যেসব দেশের সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে ইইউ-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে এ অঞ্চলে প্রভাব বৃদ্ধিতে ব্রাসেলসের আগ্রহের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। ইউরেশিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতায় ব্রাসেলস একটি শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

বার্তা সংস্থা ইরনা'র বরাত দিয়ে পার্সটুডে আরও জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন 'গ্লোবাল গেটওয়ে' নামক প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এর বিকল্প বাণিজ্য করিডোর তৈরি করার চেষ্টা করছে। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মধ্য এশিয়ায় পরিবহন ও বাণিজ্য করিডোরের জন্য একটি বড় বিনিয়োগ বরাদ্দ করা হয়েছে।

ইইউ-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলোর মধ্যে একটি অর্জন ছিল বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি। মধ্য এশীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া 'মিডল করিডোরে' ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেয়েনের ১০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। লক্ষ্য হলো রাশিয়াকে বাইপাস করে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে মালামাল পরিবহণের সময় অর্ধেকে অর্থাৎ ১৫ দিনে কমিয়ে আনা।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এবং লোহিত সাগরে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে সরবরাহ লাইন ব্যাহত হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে মধ্য এশিয়ার ভূ-কৌশলগত যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে, উজবেকিস্তান এবং কাজাখস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে ইউরোপের দিকে তাকাচ্ছে, বিশেষ করে মিডল করিডোরের বর্ধিত সংযোগের মাধ্যমে।

৩-৪ এপ্রিলের বৈঠকে মধ্য এশীয় নেতারা জোর দিয়েছিলেন যে ভবিষ্যতের সহযোগিতা বাস্তব ফলাফলের ওপর বিবেচনা করে করা উচিত। বিশেষ করে যোগাযোগ ও বাণিজ্য, শক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের সরবরাহ লাইনে বিনিয়োগের ওপর দৃষ্টি দেওয়া উচিত। রাশিয়া এবং চীন যে উন্নত ইউরোপীয় শিল্প প্রযুক্তি সরবরাহ করার চেষ্টা করছে তাতে মধ্য এশিয়াও আগ্রহী, অন্যদিকে ব্রাসেলসের নজর রয়েছে এ অঞ্চলের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর।

মধ্য এশিয়া থেকে তুর্কিয়ের পিছনে

ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন থেকে উদ্ভূত আরেকটি বিষয় কিছুটা বিতর্কিত হয়ে ওঠে, তা হল 'তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা'র সদস্যদের সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূতদের পরিচয়পত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত। ডিপ্লোম্যাট ওয়েবসাইট লিখেছে: উত্তর সাইপ্রাসের তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে স্বীকৃতি না দেওয়া জাতিসংঘের প্রস্তাবের প্রতি অঙ্গীকার সম্পর্কিত যৌথ বিবৃতি তুরস্কে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

এই প্রতিবেদন অনুসারে, মধ্য এশীয় তিনটি দেশ সাইপ্রাসের ব্যাপারে জাতিসংঘের দুটি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে তুরস্কের ওপর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে, যা মিত্রদের মধ্যে কূটনৈতিক বিবাদ সৃষ্টি করতে পারে।

কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান সকলেই তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন (OTS) এর সদস্য। ২০০৯ সালে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রে অভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই সংগঠনটি। ইস্তাম্বুলে এর সদর দপ্তর অবস্থিত।

তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর সংগঠনের ১০ম শীর্ষ সম্মেলনআস্তানা ২০২৩

২০২২ সালে কাজাখস্তান তুর্কি রাষ্ট্র সংস্থায় পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে, এর কর্মকর্তারা বেশ কয়েকটি সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। গত বছর বিশকেকে অনুষ্ঠিত সংস্থার ১১তম সভায়ও উপস্থিত ছিলেন কাজাখ কর্মকর্তা। কিন্তু আস্তানায় পূর্ববর্তী বৈঠকে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের উত্তর সাইপ্রাসকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি।

দুই বছর আগে, ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান দেইতামার ক্রেইসলার তুর্কি প্রজাতন্ত্রের উত্তর সাইপ্রাসকে পর্যবেক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর সংগঠনের সিদ্ধান্তকে সমর্থনকারী দেশগুলোর সম্ভাব্য 'নেতিবাচক পরিণতি' সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।

কোনো কোনো পর্যবেক্ষক কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সিদ্ধান্তকে তুরস্কের জন্য একটি আঘাত হিসেবে দেখছেন। কারণ ইউরোপের ওপর চীন ও রাশিয়ার পরে এই দেশগুলোর প্রভাব বেশি, কেননা ইউরোপ এবং পশ্চিমের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ট।#

Your Comment

You are replying to: .
captcha